ডাইনিদের কূপ – নামটা শুনলেই মনের মধ্যে কেমন যেনো একটা ভয় ধরানো অনুভূতির সৃষ্টি হয়! মনে হয় এটা বুঝি এমন কোন কূপ যার ভেতরে ডাইনিরা বসবাস করে! ধারে কাছে কেউ গেলেই ধরে নিয়ে যাবে কুয়ার ভেতর, তারপর ঘাড় মটকে খেয়ে ফেলবে! আসলে কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তেমন কিছু নয়। সেই আলোচনায় আসছি এখন।
ডাইনিদের কূপ আসলে কি?
কূপ বা কুয়া বলতে আমরা সাধারণত কি বুঝি? মাটিতে গোল করে কাটা গভীর গর্ত, যার ওপর থেকে অনেক নিচে পানি দেখা যায়। দড়িতে বালতি ঝুলিয়ে সেই গভীর কূপ থেকে পানি তুলতে হয়। কুয়া অথবা কূপের কথা শুনলেই এমন একটি দৃশ্য নিশ্চয়ই আপনার চোখের সামনে ভেসে ওঠে! কারন বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে এখনো অনেক যায়গায় এমন গভীর কূপ দেখা যায়। কিন্তু যদি বলি, এমন কূপও আছে পৃথিবীতে- যার বাইরেই দড়িতে বালতি ঝুলে থাকে, আর কূপ বেয়ে পানি উপচে পড়ে চারিদিকে। আর এত বেশি পানি গড়িয়ে পড়ে যে কূপের চারপাশে মোটামুটি ছোটখাটো একটা বন্যা বয়ে যায়। কি? বিশ্বাস হচ্ছে না তাই না? বিশ্বাস না হওয়ারই কথা। কিন্তু এ রকম একটি কূপ সত্যি সত্যি আছে পৃথিবীর বুকে! মানুষ এই কূপের নাম দিয়েছে- ‘ডাইনিদের কূপ’।ডাইনিদের কূপ কোথায় অবস্থিত?
প্রকৃতির অদ্ভুত এই সৃষ্টি রয়েছে ‘এস্তোনিয়া’র উত্তরাঞ্চলের ‘তুহালা’ গ্রামে। প্রায় ৩ হাজার বছর আগে নির্মিত হয় এই কূপ। এই কূপের গভীরতা কিন্তু মোটেও খুব বেশি নয়, মাত্র ২.৫ মিটার। আর এই গভীরতায় বেড়িয়ে আসে এত পরিমাণ পানি। আসলেই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তবে এই পানি কিন্তু বছরের ১২ মাসই পাওয়া যায় না। মূলত শীতকাল আর বর্ষাকালেই পানি পাওয়া যায়। আর যখন পানি পাওয়া যায় তখন চারপাশের কি অবস্থা হয় তা তো আগেই বলেছি।ডাইনিদের কূপ নামকরণের কারণ কি?
ডাইনিদের কূপ এর নামকরণের পেছনে আছে এক মজার কাহিনী। এখানকার স্থানীয়দের মাঝে একটা প্রচলিত লোককথা আছে এই কূপ নিয়ে। তাদের ধারণা- প্রতিবছর নির্দিষ্ট এক সময়ে এই কূপের নিচে ডাইনিরা একত্র হয় গোসল করতে। আর এ সময় তারা নিজেদের মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়। এটা আবার মামুলি কোন ঝগড়া নয়! কথা কাটাকাটি থেকে হয় হাত চালাচালি। একজন আরেকজনের ওপর আক্রমণ চালায়। আর এই আক্রমণের কারণেই পানি এ রকমভাবে বের হয়ে আসে।তুহালা অঞ্চলের মানুষরা সম্ভবত সবাই হ্যারি পটারের ফ্যান। তারা যাদুর রাজ্যে বসবাস করতে বেশি পছন্দ করে, সেকারণেই হয়তো জ্ঞান বিজ্ঞানের এই যুগেও আজও বেঁচে আছে এসব লোককথা। আবার অনেকে বলেন, তারা রাতের বেলা এই কূপের ওপর দিয়ে আগুনের গোলক উড়ে যেতে দেখেছেন। আবার অনেকের ধারণা এটা সৃষ্টিকর্তার এক অলৌকিক নিদর্শন। যে যা-ই বলুক না কেন, এই কূপের সব ঘটনার কিন্তু বেশ শক্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।


0 মন্তব্যসমূহ